শিবিরের হামলার গোপন তথ্য ফাঁস, পুলিশ কর্মকর্তার ভিডিওটি এআই তৈরি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভিডিওটি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বাস্তব কোনো বক্তব্যের নয় বরং এআই প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরা এক কর্মকর্তা বলছেন, 'আমাদের কাছে খবর আছে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছে এবং তারা আওয়ামীলীগের লগডাউন সমর্থন জানিয়েছে। আমরা গোপনসূত্রে খবর পেয়েছি আগামীকাল ১৩ তারিখ (নভেম্বর) বিএনপি এবং শিবির যানবাহনে আগুন দেবে এবং এর দায়ভার আওয়ামীলীগের উপর চাপাবে'। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
১৩ই নভেম্বর ‘মো মিলন শেখ’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয় "৫০ জন সমন্বয়কের পদত্যাগ এবং ১৩ তারিখ বিএনপি এবং শিবিরের হামলার গোপন তথ্য ফাঁস ......" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি বাংলাদেশ পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্যের নয় বরং এআই প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ভিডিওকে বাস্তবে দেওয়া বক্তব্যের বলে প্রচার করা হচ্ছে
পরবর্তীতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বক্তব্যে অসম্পূর্ণ শব্দ দিয়ে বাক্য শুরু এবং অস্বাভাবিকভাবে কথা বলতে দেখা যায়। এছাড়াও পেছনের কয়েকজন ব্যক্তিকে অসাড়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওতে; বিশেষ করে ছবি বা স্থিরচিত্র এআই-এর মাধ্যমে ভিডিওতে রূপান্তর করলে একই জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গভঙ্গি বা অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।
ভিডিওতে বাস্তব এমন দৃশ্যের অডিওর তুলনায় ভিডিওটিতে কথা বলার সাউন্ড কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। সাধারণত গুগলের ভিও-৩ বা এর হালনাগাদকৃত মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা এআই ভিডিওতে অডিওর এমন উচ্চতর আউটপুট শোনা যায়।
গুগল 'Veo' হলো গুগলের একটি প্রায় বাস্তবসম্মত ভিডিও জেনারেশন টুল যা গুগল ডিপমাইন্ড দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি টেক্সট-টু-ভিডিও জেনারেশন, ইমেজ-টু-ভিডিও জেনারেশন এবং সর্বশেষ সংস্করণ, ভিও-৩ ভিডিওর পাশাপাশি নেটিভ অডিও তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও গুগলের জেনারেটিভ টুল তাদের কন্টেন্টে 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে দেখা না গেলেও গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করলে টুলটি আলোচ্য ভিডিওটি 'গুগলের এআই টুল দিয়ে তৈরি' বলে ফলাফল দিয়েছে। দেখুন--
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আলোচ্য স্থিরচিত্রের মূল ঘটনার (গত ফেব্রুয়ারির পুরোনো দৃশ্য) ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়। আলোচ্য ভিডিওর স্থিরচিত্র (বামে) ও গণমাধ্যমে পাওয়া মূল ঘটনার দৃশ্যের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন --
অর্থাৎ ভিডিওটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি।
উল্লেখ্য, আলোচ্য ভিডিওতে প্রচারিত দাবি (বক্তব্য) সরাসরি সার্চ করে গণমাধ্যম সহ গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ভিডিওকে বাস্তবে দেওয়া বক্তব্যের বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।




