
মেয়েদের বুয়েটে পড়া নিষিদ্ধ ছিল না কখনো
১৯৬৪ সালে বর্তমান বুয়েটে পড়তে মামলা করতে হয়েছে তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানান ওই তিন প্রকৌশলীর একজন।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি তিন নারীর একটি সাদাকালো ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, তারা মামলা করে বুয়েটে পড়েছিলেন কারণ তখন মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ ছিল । এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ২৯ নভেম্বর 'Shah Reza Alam' নামের ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি শেয়ার করা হয়, ছবিতে লেখা হয়েছে, "১৯৬৪ সালের দিকে বুয়েটে তখন মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ। দোরা রহমান, মনোয়ারা ও চুমকি নামের এই তিন বাঙালী মেয়ে বুয়েটে পড়তে না পারার কারণে কোর্টে মামলা ঠুকে দেন। মামলায় জয়ী হয়ে প্রথম মেয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে তারা বুয়েটে পড়ার সুযোগ পান। বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা এই তিন সাহসী বাঙালি নারীর প্রতি অকৃত্তীম শ্রদ্ধা।" স্ক্রিনশট দেখুন-

ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভাইরাল ছবির ক্যাপশনে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইপুয়েট) বা বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ে (বুয়েট) ১৯৬৪ সালে মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ ছিলোনা এবং ভাইরাল তিন নারী প্রকৌশলী মামলাও করেননি।
রিভার্স ইমেজ সার্চের করলে, ভাইরাল ছবিটি ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো'র " 'আমাদের দেখতে ভিড় লেগে যেত' " শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবির তিন নারী প্রকৌশলীর একজন খালেদা শাহারিয়ার কবির (ডোরা রহমান) প্রথম আলোর সাথে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। প্রতিবেদনে তাদের অপর দুই নারীর পরিচয় হিসাবে বলা হয়েছে, তাদের একজন শিরীন সুলতানা এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। আর মনোয়ারা বেগম ২০০২ সালে মারা গেছেন।

ইপুয়েটে (বর্তমান বুয়েট) মেয়েদের পড়া কি নিষিদ্ধ ছিল?
প্রথম আলোর সাথে আলাপচারিতায় খালেদা শাহারিয়া জানান, মূলত সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে ওই সময় ইপুয়েটে ( বর্তমান বুয়েট) মেয়েদের ভর্তি নেওয়া হতো না। প্রথম আলোকে খালেদা শাহারিয়ারের বলেন, 'আমি আর শিরীন তখন ইডেন কলেজে পড়ি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ইঞ্জিনিয়ারই হব। আমাদের ইচ্ছার কথা হলিক্রস কলেজের মনোয়ারার কানে পৌঁছাল। তিনজন মেয়ে দেখে স্যাররা রাজি হলেন। তখন প্রথম বর্ষে একটিই সাধারণ বিভাগ ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পুর, তড়িৎ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ ভাগ হতো।'
তিনি যুক্ত করেন "পুরকৌশলে মেয়েদের পড়তে দেওয়া হতো না।" এর কারণ হিসাবে তিনি জানান, এই বিভাগে পড়লে সাভারে এক মাসের জন্য থাকতে হবে সার্ভের জন্য। ফলে তাদের তিনজনকে শর্ত দেওয়া হয়েছিলো, তাঁরা পুরকৌশলে পড়তে পারবেন না এবং এই শর্ত মেনেই ভর্তি হয়েছিলেন তাঁরা।
অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে বুয়েটে (মূলত ইপুয়েটে) মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ ছিল তথ্যটি সঠিক নয়। তৎকালে তারা তিনজনই প্রচলিত নিয়ম মেনেই ভর্তি হয়েছিলেন।
তাদের কি মামলা করতে হয়েছিলো ?
এই তথ্যটিও সঠিক নয় বলে জানান খালেদা শাহারিয়া। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'তথ্য বিকৃতি করে কারা যেন এ কথা ছড়িয়েছে। আমাদের মামলা করতে হয়নি।'
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন " 'আমি আর শিরীন স্যারদের কাছে গিয়ে বললাম পুরকৌশলে পড়ব। কিন্তু স্যাররা কিছুতেই রাজি নন। পরে আমরা বললাম, সংবিধানে তো বলা নেই পুরকৌশলে মেয়েরা পড়তে পারবে না। তাই আপনারা পড়তে না দিলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব।' এবং একই প্রতিবেদেন সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে খালেদা শাহারিয়ার কবির ও শিরীন সুলতানা বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে মনোয়ারা বেগম কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি পান।

অর্থাৎ, তারা মামলা করে ভর্তি হয়েছিলেন বলে করা দাবিটিও সঠিক নয়।
Updated On: 2021-12-01T17:17:57+05:30
Claim : ১৯৬৪ সালের দিকে বুয়েটে তখন মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ
Claimed By : Facebook post
Fact Check : Misleading
Next Story