বাংলাদেশি পাসপোর্টে লাগানো ভিসা স্টিকারকে 'ভারতীয় পাসপোর্ট' বলে প্রচার
"ইলিয়াছ হোসাইন" নামের একটি ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এমন ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ও বর্তমানে রিমান্ডে থাকা টেকনাফ থানার সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নানান অপকর্ম বিষয়ে ৬ আগস্ট একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে "ইলিয়াছ হোসাইন" নামক একটি ফেসবুক পেইজে।
একই ভিডিও আরও বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছে একই দিনে। তেমন কয়েকটি লিংক দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
উপরের উল্লিখিত সবক'টি জায়গায় ভিডিওর ক্যাপশন দেয়া হয়েছে, "মেজর সিনহার খুনী ওসি প্রদীপ দাস একজন ভারতীয় নাগরিক!"
১৫ মিনিট ০৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে প্রদীপ কুমার দাশের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যার মধ্যে টেকনাফে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদককে উছিলা হিসেবে ব্যবহার করে দলমত নির্বিশেষে মানুষের ওপর নির্যাতন, নিরপরাধ মানুষকে খুন করাসহ আরও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য প্রদীপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সংক্রান্ত খবর ইতমোধ্যে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেরকম কিছু খবরের লিংক দেখুন এই প্রতিবেদনের শেষাংশে।
"ইলিয়াছ হোসাইন" নামক পেইজে আপলোড করা ভিডিওর ৯ মিনিট ২২ সেকেন্ডের পর থেকে উপস্থাপক বলেন, "...ভারতে এসব সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে তিনি এরই মধ্যে পেয়েছেন ভারতের নাগরিকত্ব। আমাদের অনুসন্ধানে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর বাংলাদেশ এবং ভারতের দুটি পাসপোর্টের সন্ধান মিললেও প্রদীপের ভারতীয় পাসপোর্টটি পাওয়া সম্ভব হয়নি। অবশ্য গোয়েন্দা সংস্থা চাইলে তা খুব সহজেই খুজে পাওয়া সম্ভব।..."
এ সময় স্ক্রিনে দেখানো হয় নিচের ছবিটি--
এরপরে দেখানো হয় নিচের ছবিটি (এই ছবিতে হলুদ ও লাল রঙের ঘরগুলো বুম বাংলাদেশ কর্তৃক যোগ করা)--
উপস্থাপক যখন বলছিলেন, "ওসি প্রদীপের স্ত্রীর বাংলাদেশ এবং ভারতের দুটি পাসপোর্টের সন্ধান মিললেও প্রদীপের ভারতীয় পাসপোর্টটি পাওয়া সম্ভব হয়নি..." তখন স্ক্রিনে দেখানো হয় নিচের ছবিটি (এই ছবিতে হলুদ ও লাল রঙের ঘরগুলো বুম বাংলাদেশ কর্তৃক যোগ করা)--
অর্থাৎ, স্ক্রিনে দেখানো ছবিটিতে পাশপাশি যে দুটি যে বইয়ের পাতা দেখা যাচ্ছে সেগুলোর একটিকে প্রদীপের স্ত্রী চুমকির 'বাংলাদেশি পাসপোর্ট' আর অপরটিকে তার 'ভারতীয় পাসপোর্ট' হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিওতে পরক্ষণে চুমকির 'ভারতীয় পাসপোর্ট' এর ছবি হিসেবে একটি ছবিতে আলাদা করে স্ক্রিনে দেখানো হয়। এবং সেই ছবিতে থাকা "Republic of India" লেখার নিচে বড় করে লাল দাগ দিয়ে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ এটা বুঝানো হয়েছে যে, "Republic of India শব্দগুলো লেখা থাকায় এটা প্রমাণিত হয় এটি ভারতীয় পাসপোর্ট"। নিচে দেখুন স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
উপরিউক্তি ভিডিওতে 'ভারতীয় পাসপোর্ট' বলে দাবি করা বইয়ের পৃষ্ঠাটি আসলে ভারতীয় পাসপোর্ট নয়। বরং সেটি প্রদীপের স্ত্রী চুমকির বাংলাদেশি পাসপোর্টের একটি পৃষ্ঠায় লাগানো ভারতীয় ভিসার স্টিকার।
উপরে দেয়া ছবিগুলোর হলুদ ও লাল চিহ্নিত ঘরগুলো খেয়াল করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
দ্বিতীয় ছবিতে দেখুন দুটি পাসপোর্ট বইয়ের পাশাপাশি রাখা ছবিতে উভয় পাসপোর্টের কোণায় (লাল চিহ্নিত ঘর) পাসপোর্ট নম্বর লেখা রয়েছে- BA0432075; যা চুমকির বাংলাদেশি পাসপোর্টের নম্বর।
এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে "Republic of India" শব্দগুলোর নিচে বড় বড় ক্যাপিটাল লেটারে VISA লেখা রয়েছে। ভারতীয় ভিসা স্টিকারে ভিসার ধরণ, কতবার প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, ইস্যুর তারিখ ইত্যাদি সব তথ্য ইংরেজি ও হিন্দিতে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য হচ্ছে, কোনো দেশের পাসপোর্টে সেই দেশের ভিসা ইস্যু করা হয় না। এবং কোনো দেশের নাগরিক থাকাবস্থায় সেই দেশে প্রবেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।
অর্থাৎ, "ইলিয়াছ হোসাইন" নামক পেইজে আপলোড করা ভিডিওতে প্রদীপের স্ত্রীর বাংলাদেশি পাসপোর্টে লাগানো ভারতীয় ভিসার স্টিকারযুক্ত পেইজকে 'ভারতীয় পাসপোর্ট' হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই ভিডিওতে উপস্থাপিত অন্যান্য তথ্যের বিষয়ে বুম বাংলাদেশ ফ্যাক্ট চেক করেনি।
ওসি প্রদীপের নানান অপরাধ বিষয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের লিংক:
২০১৬ সাল:
বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ফের সিএমপিতে
২০১৯ সাল:
টাকা না দিলেই ক্রসফায়ার: ভয়ঙ্কর এক ওসির নাম প্রদীপ কুমার দাশ
দুর্নীতির খবর করায় পুলিশের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
চট্টগ্রামে দুদকের জালে এক ডজন 'ক্ষমতাধর' ওসি
২০২০ সাল:
ধরে এনে 'ক্রসফায়ার' দেবেন না এমন শর্তে টাকা আদায় করতেন ওসি প্রদীপ