মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে মেসবাহ কামালের বক্তব্যটি ৩ বছর পুরোনো
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, অধ্যাপক মেসবাহ কামালের বক্তব্যটি ৩ বছর আগের এবং এজন্য পরে তিনি দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন উচ্চতর মাদ্রাসা" শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালের একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
৪ নভেম্বর "Face The People-ফেস দ্যা পিপল" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে "তারা আপনার ইংরেজিতে দক্ষতা বিহীনভাবে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, এবং এটা গোটা উচ্চ শিক্ষাকে কিন্তু টেনে টেনে নিচে নামিয়ে আসছে..." বর্ণনা লিখে একটি খবরের লিংক পোস্ট করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন উচ্চতর মাদ্রাসা: ড. মেহবাহ কামাল" শিরোনামে গত ৪ নভেম্বর প্রকাশিত খবরটির বিস্তারিত অংশে লেখা হয়েছে, "গতকাল বুধবার প্রেসক্লাবে পলিটিক্যাল ইকোনমি অব মাদ্রাসা এডুকেশন ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় এসব কথা বলেন ড. মেসবাহ।" অর্থাৎ খবরে দাবি করা হচ্ছে, গত বুধবার (৩ নভেম্বর) তিনি প্রেসক্লাবে আলোচ্য বক্তব্যটি দিয়েছেন। খবরের স্ক্রিনশট দেখুন-
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, "গত বুধবার" প্রেসক্লাবে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বক্তব্যটি দিয়েছেন বলে করা দাবিটি সঠিক নয়। মূলত ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি (শনিবার) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে 'বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি' শীর্ষক একটি বইয়ের বাংলা সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বক্তব্যটি দেন এবং পরবর্তীতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বক্তব্যটি নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেন।
সার্চ করার পর, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে: ঢাবি অধ্যাপক মেসবাহ" ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ক্যাম্পাস টাইমস ডট প্রেস নামের একটি অনলাইন পোর্টালে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালের বক্তব্য সংক্রান্ত খবর খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এই খবরটির বিভিন্ন অংশ কপি করে, কেবল দিনের নাম বদলে বিভ্রান্তিকরভাবে বক্তব্যটি সাম্প্রতিক দাবি করা প্রচার করা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালে।
ভাইরাল অনলাইন পোর্টালের খবর ও ক্যাম্পাস টাইমস ডট প্রেস-এর খবরের পাশাপাশি তুলনা দেখুন-
ক্যাম্পাস টাইমস ডট প্রেস-এর খবরটিতে লেখা হয়েছে, "২৭ জানুয়ারি (২০১৮) শনিবার প্রেস ক্লাবে পলিটিকাল ইকোনমি অব মাদ্রাসা এডুকেশন ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।"
সার্চ করার পর, দৈনিক ইনকিলাবে "কর্মমুখী বিজ্ঞানসম্মত মাদ্রাসা শিক্ষার তাগিদ" শিরোনামে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালের বক্তবটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং সেখানেও বক্তব্যটি ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালের বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি "'মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে বেশি গবেষণা প্রয়োজন'" শিরোনামে প্রকাশিত বাংলা ট্রিবিউনের এই অনুষ্ঠান সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,"দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন গবেষকরা। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে 'বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি' শীর্ষক একটি বইয়ের বাংলা সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।"
অর্থাৎ বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি সঠিক হলেও অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বক্তব্যটি দেন ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি (শনিবার)।
বিস্তারিত সার্চ করার পর দেখা গেছে, বক্তব্যটি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে সেই বছরেরই ১ ফেব্রুয়ারি ড. মেসবাহ কামাল তার বক্তব্যটি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
প্রসঙ্গত চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এই অধ্যাপক প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে যোগদান করেছেন বলে মূলধারার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং ৩ বছর পুরানো একটি বক্তব্যকে দিনক্ষণের নাম বদলে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।