সিলেটে তুষার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হন তুষার আহমদ চৌধুরী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সিলেটে তুষার আহমেদ চৌধুরীকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৬ এপ্রিল ‘Kabir Chowdhury Tanmoy’ নামক পেজ থেকে ফটোকার্ডটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “আমি শিবিরকে ধন্যবাদ জানাবো। কারণ, তারা তাদের চারিত্রিক সনদ সব সময় প্রকাশ করে থাকে। 😉 এই যেমন, তুষার আহমেদ চৌধুরী। এই ছেলে প্রথমে ভয়াবহভাবে হিজবুত আর শিবিরের সাথে মিলেমিশে সিলেটে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে জুলাই-আগস্ট স./ন্ত্রা/সী কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলো। কথায়, কাজে, প্রকাশে তুষার নিজেকে নব্য শিবিরকর্মী বলে গর্ববোধ করতো। আলবদর থেকে লাবদর হয়েছিল----- তুষারের মৃত্যুতে আমি মোটেও বিচলিত বা দুঃখীত নই। কারণ, এই তুষারদের মত Gen-Z'রা বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক, একটি সাজানো গোছানো মাথা উঁচু করা আত্মমর্যাদার বাংলাদেশ ধ্বংস করে দিয়েছে হাজার-হাজার পুলিশকে হ./ত্যা/র মধ্য দিয়ে। হাজার-হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হ./ত্যা করে। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করার মধ্য দিয়ে। 😢😭 তুষারের মৃত্যুতে আমি আলহামদুলিল্লাহ বলবো। 💞 🇧🇩আপনি..?” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, সিলেটে নিহত তুষার আহমেদ চৌধুরী শিবিরকর্মী ছিল ও জুলাই আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের পক্ষে কাজ করেছে এবং এখন ছাত্রশিবিরের হামলায়ই তার মৃত্যু হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের তুষার আহমেদ চৌধুরী ছাত্রশিবিরের কর্মী নয় বরং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের হাতে নয় বরং ছাত্রলীগেরই দুই গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে তিনি নিহত হন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের কথা কাটাকাটি, ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত” শিরোনামে ‘জাগোনিউজ’ এর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ্য করা হয়, সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কথা কাটাকাটির জেরে তুষার আহমদ চৌধুরী (১৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে নগরীর শাহী ঈদগাহ ভ্যালি সিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন দলদলি চা বাগান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের দুই ঘণ্টার মাথায় জাবেদ আহমদ নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে “সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগে সংঘাত, ছুরিকাঘাতে একজন খুন” শিরোনামে ‘দৈনিক নয়া দিগন্তে’র অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ্য করা হয়, আভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে বিরোধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তুষার আহমেদ চৌধুরীকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এরপর ঘটনাস্থলের পাশের চা বাগানের শ্রমিকরা বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার শুনে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পাঠালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, সার্চ করে ‘প্রথম আলো’, ‘বাংলানিউজ’সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেসব প্রতিবেদনে কোথাও তুষার আহমেদ চৌধুরী শিবিরকর্মী ছিলেন এবং শিবিরকর্মীদের হাতেই তিনি নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ সিলেটের প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত তুষার আহমেদ চৌধুরী শিবিরকর্মী ছিলেন না এবং তিনি শিবিরকর্মীদের হাতে নিহত হননি। বরং তুষার ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দালে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনি নিহত হন।
সুতরাং সিলেটে তুষার আহমেদ চৌধুরীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা বিভ্রান্তিকর।