জুলাই আন্দোলনের ভিডিওকে সেনা বিদ্রোহের দাবিতে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি জুলাই আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জের সময়ে ধারণ করা হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সাভার সেনানিবাসে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। এরকম একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ২৪ আগস্ট 'জয় বাংলা জয়' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "এই মুহুর্তে সাভার ক্যান্টরমেন্টে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ চলছে, পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরের প্রতিবাদে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং রাজাকারের বাচ্চাদের সাথে ব্যপক সংঘর্ষ চলছে... হঠাও দেশ বাঁচাও। এগুলো দালাল মিডিয়া প্রচার করবে না।"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর ইসিবি চত্ত্বরে শিক্ষার্থীদের উপরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আলোচ্য ভিডিওটি সেই সময়েই ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Atiqur Rahman Nayan' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই পোস্ট করা আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, ওই ভিডিওটির সম্পর্কে কোনো তথ্য পোস্টটি থেকে পাওয়া যায়নি। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
আরো সার্চ করে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই "MD Imam Hossain" নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "মিরপুর ইসিবি চত্ত্বরে পুলিশের গুলি আজকে। একজন গ্রেপ্তার। #কোটা_সংস্কার #বৈষম্য_বিরোধী_আন্দোলন"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়াও, আরো একাধিক ফেসবুক পেজে আলোচ্য ভিডিওটি একই তথ্যসহ খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই "ইসিবি চত্বরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের পুলিশের লাঠিপেটা, মিরপুর ও ধানমন্ডি থেকে আটক ২০" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "রাজধানীর মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর ও ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে আজ সোমবার দুপুরে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। ইসিবি চত্বরে জড়ো হওয়া একদল বিক্ষোভকারীকে লাঠিপেটা করে পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার পর আজ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক গতকাল রোববার এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপরই অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে এই আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদের ঘটনার নয় বরং ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য গত ২৩ আগস্ট পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন।
সুতরাং ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনের ভিডিওকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সাভার সেনানিবাসে বিদ্রোহের ঘটনার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।