'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের ভুয়া খবর ফেসবুকে
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে চলমান টানা ১৪ দিনের 'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি একাধিক অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে, চলমান 'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলবে মর্মে একটি খবর প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এ সংক্রান্ত খবরটি শেয়ার করতেও দেখা গেছে। এমন কিছু পোস্টের লিংক দেখুন এখানে এবং এখানে।
গত ২০ জুলাই 'সময়ের খবর' নামের একটি ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে লেখা হয়, "এইমাত্র পাওয়াঃ শর্ত সাপেক্ষে চলবে গণপরিবহন হতে পারে সাধারন লকডাউন"। হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটির ডেটলাইনে প্রকাশের সময় (আপডেট করা) লেখা আছে '২১ জুলাই ২০২১'। অর্থাৎ ফেসবুক ও পোর্টালের খবর প্রকাশের তারিখ দেখে বোঝা যায়, খবরটিতে গত ২৩ জুলাই শুক্রবার সকাল থেকে দেশজুড়ে চলমান ১৪ দিনের 'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের কথা বলা হচ্ছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, চলমান 'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচল ও কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করে সাধারণ লকডাউন হতে পারে সংক্রান্ত তথ্যটি ভিত্তিহীন। এছাড়া, খবরটির শিরোনামে শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের কথা উল্লেখ করা হলেও মূল খবরে এ রকম কোন তথ্য নেই। বরং খবরটির ভিতরে রাজধানীর যানজট নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে 'গ্রিন ক্লাস্টার' নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস সার্ভিস পরিচালনা সংক্রান্ত সরকারি এক সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে।
গুগল সার্চের মাধ্যমে দেখা গেছে, এই খবরটিও পুরোনো এবং কপি করা। মূলত, গত ৫ জুলাই 'অন্য বাস বন্ধ না করেই ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস চালুর ঘোষণা' শিরোনামে মুলধারার গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনের কিছু শব্দ পরিবর্তন করে হুবহু কপি করে আলোচ্য খবরটি তৈরি করা হয়েছে। তবে কপিরাইট এড়াতে বাক্য ও শব্দের মাঝে অযাচিত যতি চিহ্ন ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলা ট্রিবিউন ও আলোচ্য খবরটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেখুন--
মুলধারার একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, গতকাল ২৩ জুলাই ভোর ৬টায় যে 'কঠোর বিধি-নিষেধ' শুরু হয়েছে তা আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ১৪ দিন চলবে। এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, সব ধরনের শপিংমল/মার্কেট ও দোকানপাট সহ গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে। দৈনিক ইত্তেফাকের এ সংক্রান্ত খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৩ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসায়ী, 'কঠোর বিধি-নিষেধ' চলাকালে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং সব ধরনের শিল্প-কলকারখানার পাশাপাশি সড়ক, রেল ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। বুম বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটিও খুঁজে পেয়েছে।
এছাড়া, গত ১৯ জুলাই সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে, পূর্বে জারি করা বিধি-নিষেধের আওতা থেকে কেবল খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প কঠোর বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে থাকার কথা বলা হয়।
অর্থাৎ, এই প্রজ্ঞাপনেও গণপরিবহণকে কঠোর বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত রাখা হয়নি কিংবা সাধারণ লকডাউন সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তাই লকডাউন সাধারণ করার খবরটিও ভিত্তিহীন।
সুতরাং, চটকদার শিরোনামে চলমান 'কঠোর বিধি-নিষেধ'-এ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের যে খবর প্রচার করা হচ্ছে; তা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।