কোরবানি ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে সম্পর্কিত খবরটি ভিত্তিহীন
১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা তবে করোনায় সার্বিক বিধিনিষেধ ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর পর বিষয়টি এখন অনিশ্চিত।
মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদের পর সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে মর্মে একটি খবর ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ গ্রুপ ও আইডি থেকে প্রচার করা হচ্ছে। পোস্টে একটি অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত খবরের লিংক শেয়ার করা হচ্ছে।। খবরটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
'Abul Kashem Ovi ' নামের ফেসবুক আইডি থেকে গত ৮ জুন 'ETribune.Net' নামের একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করা হয়েছে যার শিরোনাম-- "এই মাত্র পাওয়াঃ কুরবানি ঈদের পর সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে"। অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে আসন্ন ঈদুল আযহার পর সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন -
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কোরবানি ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার খবরটি বিভ্রান্তিকর। খবরটির শিরোনামে কোরবানির ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও মূল খবরে এ রকম কোন তথ্য নেই। বরং খবরটির বিষয়বস্তুতে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার নানান ঝুঁকি নিয়ে তথ্য দেয়া হয়েছে।
গুগল সার্চের মাধ্যমে দেখা গেছে, খবরটিও কপি করা। মূলত, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ" শিরোনামে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ কপি করে এনে ভাইরাল এই খবরটি তৈরি করা হয়েছে।
যেমন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, "করোনার সংক্রমণ কমে এলেও এখনও ঝুঁকি রয়েছে। কোনো কোনো দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে এখন যারা খুলে দেওয়ার কথা বলছেন, খুলে দেওয়ার পর একটা বাচ্চা আক্রান্ত হলে তখন তারাই বলবেন—কেন খোলা হলো? বাচ্চারা আক্রান্ত হলে তখন তার দায় কে নেবে? তাই আরও কিছু দিন অপেক্ষা করা উচিত বলে আমি মনে করি।"
ETribune.Net এ প্রকাশিত খবরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'কে বলা মতিয়া চৌধুরীর হুবহু বক্তব্য কপি করে তুলে দেয়া হয়েছে। পোর্টালের খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, প্রতিবেদনটির অন্য অংশে বাংলানিউজের সাথে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর আলাপচারিতার অংশটিও একই ভাবে কপি করা হয়েছে এই অনলাইন পোর্টালের খবরটিতে।
তবে ভাইরাল হওয়া অনলাইন পোর্টালের মূল খবরের কোথাও ঈদুল আযহার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সম্পর্কিত কোন তথ্য দেয়া হয়নি।
পাশাপাশি, বুম বাংলাদেশ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মূলধারার কোন সংবাদ মাধ্যমে ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদের পর সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কোন খবর খুঁজে পায়নি।
প্রসঙ্গত,করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী ১৩ জুন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে, এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে। যদিও করোনা পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় দেশে জনসাধারণের চলাচল ও সার্বিক কার্যক্রমে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এ্রই প্রেক্ষাপটে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আগের ঘোষণাটিও এখন অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে।
সুতরাং, চটকদার শিরোনামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।