ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিসহ প্রচার
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের দাবিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৩ অক্টোবর 'Norur Rahman Vlog' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "হঠাও ইউনুস বাঁচাও দেশ। এখন ঢাকা কলেজের সব শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে। ছাত্র ও শিক্ষক দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ শহীদ মিনার।"। স্ক্রিনশট দেখুন--

ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। গত ১৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিয়ে বিভিন্ন দাবিতে শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে ধারণকৃত একটি ভিডিওকে ইউনূস বিরোধী বিক্ষোভের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচ্য ভিডিওটি আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ১৩ অক্টোবর 'Md. Nurul Islam' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত হুবহু একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "এখন ঢাকা কলেজের সব শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে। ছাত্র ও শিক্ষক দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ শহীদ মিনার।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে বিক্ষোভকারীদের হাতে একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। ব্যানারটিতে "কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়", "অধ্যাদেশ" "অস্তিত্ব সংকট",-- এরকম কয়েকটি শব্দ লক্ষ্য করা যায়। শব্দগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ অক্টোবর "শহীদ মিনারে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কেন? | News | Ekattor TV" শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "ঢাকা কলেজের সীমানায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।" ওই প্রতিবেদনের ২৩ সেকেন্ডে আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো ব্যানারের মত একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। ওই ব্যানারে লেখা থাকতে দেখা যায়, "আসন্ন ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের যে অস্তিত্বসংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ নিরসনের লক্ষ্যে- অস্তিত্বের সংগ্রাম। আয়োজনেঃ ঢাকা কলেজ উচ্চমাধ্যমিক এর সকল শিক্ষার্থী"। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টিভির অনলাইন ভার্সনে গত ১৩ অক্টোবর "কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "রাজধানীতে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা এরইমধ্যে শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন। ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলন পরিষদ।... শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সরকার ঘোষিত প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় আইন দ্রুত বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খুবই অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। আমরা আর কোনো কালক্ষেপণ চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় যে মডেলেই হোক অংশীজনদের মতামতের আলোকে দ্রুত খসড়া হালনাগাদ করে অধ্যাদেশ দিতে হবে।... আন্দোলনের দায়িত্বশীল মো. নাঈম হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাদেশ জারির চূড়ান্ত দিনক্ষণ না জানানো হলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশ নিয়েই তবে পড়ার টেবিলে ফিরবে। ... শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে কোনো অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি নয় বরং সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট সময়সূচি বা রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।" স্ক্রিনশট দেখুন--

অর্থাৎ, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নয়। মূলত, ঢাকা কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারি করাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অভিযোগ এবং দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। আলোচ্য ভিডিওটি ওই বিক্ষোভ চলাকালে ধারণ করা হয় ।
সুতরাং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করাকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের ভিডিওকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।




