ভিডিওটি বর-কনের নয় বরং চাচা-ভাতিজির
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, চাচা-ভাতিজির একটি ভিডিওকে ৩৫ বছরের যুবকের ৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে করার বলে প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডসে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ৩৫ বছরের এক যুবক ৯ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
একইসাথে পোস্টটির থ্রেডসে সংশ্লিষ্ট আরো অনেক তথ্য যুক্ত করা হয়। একইসাথে পোস্টটিতে "৯ বছর বয়সী শিশুদের বিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া ইরাকি আইনের খসড়া ‘শিশু ধর্ষণকে বৈধতা দেবে’, বলছেন অধিকার কর্মীরা" শীর্ষক শিরোনামের দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনের লিংক যুক্ত করা হয়। ইনস্টাগ্রামে ভিডিও সহ পোস্টটি দেখুন এখানে।
গত ১৫ জানুয়ারি ‘iramiraira’ নামক একটি থ্রেডস অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, ইরাকে ৯ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ৩৫ বছর বয়সী এক পুরুষের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির সংসদ যৌন সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ৯ বছর করে একটি আইন পাস করেছে, যার ফলে এমন বিয়ের বৈধতা তৈরি হয়েছে (সংক্ষেপিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওতে দৃশ্যমান দু’জন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি। এছাড়া তাদের বিয়ে হচ্ছেনা বরং চাচার বিয়েতে ভাতিজির সাথের একটি ভিডিওকে পরষ্পরের বিয়ের ভিডিও বলে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিওটি সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতেও একই তথ্য উল্লেখ করা হলেও পোস্টের থ্রেডে (কমেন্টে) একজন উল্লেখ করেন; আলোচ্য ব্যক্তি একজন মিশরীয় এবং মেয়েটি তার বোন (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। থ্রেড (কমেন্টে) সহ পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি রিভার্স ইমেজ সার্চে প্রচারিত ভিডিওটির মূল সংস্করণে ভিডিওটিও পাওয়া যায়। মূল ভিডিও থেকে 'Kurdish Academy' নামের একটি পেজে ভিডিওটি সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রচার করলে এটির একটি ক্রপড ভার্শন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে একটি গাড়ি ও গাড়ির নম্বর প্লেট দেখতে পাওয়া যায়। উপরোক্ত পোস্টের কমেন্ট অনুযায়ী মিশর সহ আফ্রিকার দেশগুলোর গাড়ির নম্বরপ্লেট চেক করে লিবিয়ার একটি নম্বর প্লেটের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। আলোচ্য ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশটে গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবির সাথে (বামে) লিবিয়ার গাড়ির নম্বর প্লেটের (ডানে) সাদৃশ্য দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী লিবিয়ার ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান 'She Checks'-এ খুঁজে আলোচ্য ঘটনা সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য ব্যক্তি ও তার সাথে থাকা মেয়েটির ছবি সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে; তিনি তাঁর ভাইয়ের মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে ছবিগুলো যিনি তুলেছেন তাঁর (Omar Al-Fadhil) অ্যাকাউন্টও পাওয়া যায়। ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি থেকে আলোকচিত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন, ভিডিওটি লিবিয়ায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের সময় তোলা হয়েছিল এবং এতে থাকা মেয়েটি কনে নয় বরং যুবকের ভাতিজি। ভিডিওটিতে তাদের মধ্যে একটি মজার মুহূর্ত দেখানো হয়েছে এবং মেয়েটির পরিবারের অনুমোদনক্রমে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে (অনূদিত)।
আলোচ্য লিবীয় বর, যার নাম 'মাহমুদ আল-ওয়ারফালি' তাঁর সাথেও যোগাযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওতে দৃশ্যমান মেয়েটির নাম 'ইয়াকিন আল-ওয়ারফালি' তার ভাইয়ের মেয়ে (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওতে দৃশ্যমান দু’জন বর-কনে নয় বরং সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি। এছাড়াও ভিডিওটি ইরাকের নয় বরং লিবিয়ার।
বিবাহ আইন এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিবাহ; লিবিয়া এবং ইরাকের আইনি বাস্তবতা
'She Checks' এর প্রতিবেদন অনুয়ায়ী লিবিয়ায় বিয়ের আইনি বয়স সাধারণত ২০ বছর, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমোদন নিয়ে অল্প বয়সীরা বিয়ে করতে পারে। ২০১৫ সালে, আইন পরিবর্তন করে বিয়ের বয়স ১৮ বছর করা হয়, বিচারকরা এই বয়সের নিচে বিয়ে অনুমোদন করতে পারেন। ২০২০ সালে এই পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আইন প্রযোজ্য - পশ্চিম লিবিয়া এখনও ২০১৫ সালের সংশোধনী অনুসরণ করে, ১৮ বছর বয়সে বিয়ে অনুমোদন করে, যখন পূর্ব লিবিয়া পুরোনো আইন অনুসরণ করে। লিবিয়ায় একটি বিতর্কিত আইন, বিচারকদের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নাবালকদের বিবাহ অনুমোদন করার অনুমতি দেয়।
ইরাকে, বিবাহের বৈধ বয়স ১৮ বছর কিন্তু বিচারকরা যদি শিশুটিকে শারীরিকভাবে সক্ষম বলে মনে করেন তবে ১৫ বছর বয়সে বিবাহের অনুমতি দিতে পারেন। যদিও এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ইরাকি সংসদে নয় বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি বিতর্কিত সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক হয়, রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো যার তীব্র বিরোধিতা করে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি মানুষকে বর্তমান আইন অথবা ধর্মীয় (সুন্নি বা শিয়া) বিবাহের নিয়মগুলির মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেবে। সমালোচকদের যুক্তি, এটি ন্যায়বিচার এবং সমতাকে দুর্বল করতে পারে, বাল্যবিবাহকে বৈধতা দিতে পারে, হেফাজত এবং উত্তরাধিকারে মহিলাদের অধিকার হ্রাস করতে পারে এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বৃদ্ধি করতে পারে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে লিবিয়ায় চাচার বিয়েতে চাচা-ভাতিজির একটি ভিডিওকে 'বর-কনে'র ভিডিও বলে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।