হাসানুল হক ইনুর উপরে হামলার এই দৃশ্যটি জেলখানার ভেতরের নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১৩ সালে লন্ডনে অবস্থিত এটিএন বাংলার অফিসে হামলার শিকার হন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, জেলখানার ভেতরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর উপরে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর 'Shaharul Islam' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "জেলখানার ভিতরে হাসানুল হক ইনু উপর বর্বরতা চলছে যেখানে নিরাপদ থাকার কথা ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি হাসানুল হক ইনুর উপরে জেলখানায় হামলার বা অত্যাচারের সময়ে ধারণ করা হয়নি। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর লন্ডনে অবস্থিত এটিএন বাংলার ইউকে'র অফিসে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু হামলার শিকার হলে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর "তথ্যমন্ত্রীর ওপর লন্ডনে ‘অতর্কিত হামলা’" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "মঙ্গলবার বিকালে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লন্ডনে এক টক শোতে অংশ নিতে স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার স্টুডিওতে যান তথ্যমন্ত্রী। “এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য পীড়াপীড়ি করলে মন্ত্রী তাদের অনুমতি দেন। দুই যুবক মন্ত্রীর কাছাকাছি গিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা করতে উদ্যত হয়।” এরপর এটিএন বাংলার কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মী ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রোটোকল অফিসার এগিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে দুই যুবকের ‘ধস্তাধস্তি’ হয়। এক পর্যায়ে দুই দুর্বৃত্ত দৌড়ে পালিয়ে যায় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। খবর পেয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী এবং লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি দেখে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।" বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডতকমের ইংরেজি ভার্সনেও আলোচ্য ছবিসহ Inu faces strange duo শিরোনামে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর "হামলা সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক চক্রান্তমূলক: ইনু" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার ওপর সোমবার রাতের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ এবং ‘চক্রান্তমূলক রাজনৈতিক হামলা’ বলে বিবেচনা করছেন। লন্ডন সফররত তথ্যমন্ত্রী স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা ইউকে’র এক টক্-শোতে যোগ দিতে গেলে, তার ওপর হামলা চালানো হয়। তবে তথ্যমন্ত্রী অক্ষত রয়েছেন। হাসানুল হক ইনু বিবিসিকে জানান, তিনি সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০:৩০-এ এটিএন বাংলার স্টুডিওতে যান। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক বলপূর্বক এটিএন বাংলার কার্যালয়ে ঢুকে তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালাতে চেষ্টা করে। যুবকদের দেখে তার বাঙালী বলে মনে হয়েছে। এ সময় দূতাবাসের কর্মচারি এবং এটিএন বাংলার কর্মকর্তারা এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গে যুবকদের ধস্তাধস্তি হয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়।" স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Bd Plus' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে "ইনুকে থাপড়ানো কে এই শাতিল | Hasanul Haq Inu Was Slapped By Shatil | BD Plus" শিরোনামে পোস্ট করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ৫ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে আলোচ্য ভিডিওটির ভিন্ন দিক থেকে সিসিটিভিতে ধারণকৃত দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির উপরে ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখ লেখা থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও, ভিডিওটিতে উক্ত ঘটনা হাসানুল হক ইনুর সাথে লন্ডনে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি হাসানুল হক ইনুকে জেলখানায় নির্যাতনের সময়ে ধারণ করা হয়নি। ২০১৩ সালে লন্ডনে অবস্থিত এটিএন বাংলার কার্যালয়ে হামলার শিকার হন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ইনু। আলোচ্য ভিডিওটি সেইসময়ে ধারণ করা হয়।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দিয়ে হাসানুল হক ইনুকে জেলখানায় অত্যাচারের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।