সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন নারীর সাক্ষাতকারের ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে; এটি কুমিল্লার মুরাদনগরে নির্যাতনের শিকার হিন্দু নারীর সাক্ষাতকার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ জুন ‘Prokash Kumar Gain’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “মুরাদনগর কুমিল্লার ধ /র্ষ /ণের শিকার হওয়া আমাদের সাহসী সনাতনী বোনের অগ্নিঝরা বক্তব্য! .... মুরাদনগর, কুমিল্লা 29-06-2025 ........”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরের ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর সাক্ষাতকারের নয় বরং এটি ২০২৪ সালে নাটোরের ভিন্ন এক ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর সাক্ষাতকারের খণ্ডাংশ।
ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে ‘Mizanur Rahman’ নামের একটি প্রোফাইলে ২০২৪ সালের ০২রা নভেম্বর প্রকাশিত একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্করণের ভিডিও পাওয়া যায়। প্রাপ্ত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট অংশের সাথে আলোচ্য ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
ভিডিওতে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটি নাটোরের এবং অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয় রবিউল ইসলাম। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
সে-সময়ে পোস্টকৃত বেশকিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পূর্ণ সংস্করণের ভিডিওটি পাওয়া যায় (১, ২, ৩)।
পাশাপাশি, সার্চ করে দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ঘরে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, নাটোরের সিংড়ায় এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী যুবক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। বুধবার ভোররাতে স্বামী মাছ ধরতে যাওয়ার সুযোগে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক ওই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনায় মূল অভিযুক্তের নাম ফজর আলী যাকে পুলিশ ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে।
অর্থাৎ এটি ২০২৪ সালের নাটোরের এক ভুক্তভোগী নারীর সাক্ষাতকারের ভিডিও।
উল্লেখ্য গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই ঘটনায় ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেন আরো কয়েকজন।
এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক কুমিল্লার ভুক্তভোগী নারীর বলে ২০২৪ সালে নাটোরের ভিন্ন এক ভুক্তভোগী নারীর সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।