সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ২৬ জন নিহত হওয়ার সাথে সম্পৃক্তদেরকে তাদের বাড়িতে হত্যা করার সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ এপ্রিল 'Pritam Das' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া একটি বাড়ির একটি রিলস শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, "ব্রেকিং 25/4/25:- কাশ্মীরে স*ন্ত্রাসীদের আস্তানা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে...❤️ যে বাড়িতে আফজাল দেখা যাবে, সেটাই ছাই হয়ে যাবে...🔥 #বাটেঙ্গে_তো_কাটেঙ্গ #এক_হ্যায়_তো_সেভ_হ্যায় #PahalgamAttack #মুর্শিদাবাদ #ashoknagarkalyangarh #savebangalihindu #kashmirincident #pahalgam #barsat #Dhuliyan"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ, ভিডিওতে দেখানো আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া বাড়িটি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কাশ্মীরের জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের এবং ঘটনাটিও সাম্প্রতিক বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি পুরোনো। ভিডিওটিতে দেখানো বাড়িটি সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গী হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বাড়ি নয়। মূলত ২০২১ সালে কাশ্মীরের অনন্তনাগ শহরের কোকেরনাগ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।
ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Kashmir Portraits' নামে একটি ফেসবুজ পেজে ২০২১ সালের ১২ মে করা একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "Visuals from kokernag gunfight in which three militants were killed on Tuesday morning."(মঙ্গলবার সকালে কোকেরনাগে বন্দুকযুদ্ধে তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার দৃশ্য।)"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে উপরে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ২০২১ সালের ১২ মে কাশ্মীর থেকে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম এশিয়ান মেইলের ইউটিউব চ্যানেলে "Vailoo Kokernag encounter :Viral Video" শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ডেস্ক্রিপশানে বলা হয়,"Vailoo kokernag encounter in which 3 militants where killed. Militant can be seen clearly in video trying to escape from the encounter site. (ভাইলু কোকেরনাগে সংঘর্ষে ৩ জঙ্গি নিহত। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জঙ্গিটি সংঘর্ষস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।)"। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও, Excelsior News-নামে কাশ্মীর থেকে পরিচালিত আরেকটি সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচ্য ভিডিওটি একই তথ্যসহ খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার কোকেরনাগ এলাকার ভাইলু গ্রামে এক সংঘর্ষে তিন স্থানীয় লস্কর-ই-তৈয়বা সন্ত্রাসী নিহত হয়। কোকেরনাগের শেখপোরা গ্রামে একটি আবাসিক বাড়িতে তিন সন্ত্রাসীর উপস্থিতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে ঘেরাও এবং তল্লাশি অভিযান চালায়।
অর্থাৎ, আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। কাশ্মীরের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িতদের সাথে ভিডিওতে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া এই বাড়ির সম্পৃক্ততা নেই। ২০২১ সালে কাশ্মীরের কোকেরনাগ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সাথে যৌথবাহিনীর এক বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং ২০২১ সালে কাশ্মীরে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।