সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভারতে ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ার পরে সেদেশের মাদ্রাসাগুলো দখল করে নিচ্ছে সেদেশের সরকার। এরকম একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ৮ এপ্রিল 'Al Shadi Mahmud Arif' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়, "এটা হচ্ছে ভারতের ওয়াকফ বিল পাশের পরের ঘটনা.. মসজিদ, মাদরাসা গুলো উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু করেছে সেদেশের প্রশাসন।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি ওয়াকফ বিল পাশের পরে মাদ্রাসা দখলের নয়। ওয়াকফ বিল পাশের আগেই চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অনিবন্ধিত একটি মাদ্রাসা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ার সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ২৩ মার্চ 'Shahzad Alam' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে পোস্ট করা আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "Uttrakhand ke madaris per Dhami Sarkar ki badi kaarvayi" (উত্তরাখণ্ডের মাদ্রাসা নিয়ে বড় পদক্ষেপ ধামি সরকারের- অনূদিত)। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
আরো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Uttarakhand Time TV' নামে একটি ফেসবুক পেজেও গত ২২ মার্চ পোস্ট একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "भगवानपुर तहसील प्रशासन ने आज अवैध रूप से संचालित मदरसों के खिलाफ अभियान चलाया। जिसमें छांगामजरी में कार्रवाई की गई। (“ভগবানপুর তহসিল প্রশাসন আজ অবৈধভাবে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। যার মধ্যে চাঙ্গামজারিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” গুগলের সাহায্যে অনূদিত)"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Bhagwanpur express news भगवानपुर एक्सप्रेस न्यूज' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ মার্চ "उत्तराखंड में धामी सरकार अवैध मदरसों पर कार्रवाई कर रही भगवानपुर में प्रशासन ने अवैध मदरसे सीज किए" শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে আলোচ্য ভিডিওর ব্যক্তিদেরকেই অনিবন্ধিত মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। ভিডিওটির বর্ণনায় লেখা থাকতে দেখা যায়, উত্তরাখণ্ডে অনিবন্ধিত এবং অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি ওয়াকফ বিল পাশের পরে মাদ্রাসা বন্ধের ঘটনার নয়। মূলত, ওয়াকফ বিল পাশের আগেই ভারতের উত্তরাখণ্ডে রাজ্যের অনিবন্ধিত একটি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের লোকেরা ব্যবস্থা গ্রহণের সময় আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য গত ৮ এপ্রিল থেকে ভারতে ওয়াকফ বিল পাশ এবং কার্যকর করা হয়। এরআগে গত ২ এপ্রিল রাতে লোকসভায় এবং পরদিন ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় বিলটি অনুমোদন পায়। এরপর ভারতের ওয়াকফ বিল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। আর অনিবন্ধিত এই মাদ্রাসাটি প্রশাসনের বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাটি ঘটে গত মার্চ মাসের ২২ তারিখ। অর্থাৎ মাদ্রাসা বন্ধ করার ঘটনাটি ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ার আগের ঘটনার। তবে মাদ্রাসাটি কোন আইনে স্থানীয় প্রশাসন উচ্ছেদ করেছে তা আলাদাভাবে যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
সুতরাং ওয়াকফ বিল পাশের আগে ভারতের উত্তরাখণ্ডে অনিবন্ধিত মাদ্রাসা বন্ধের ভিডিওকে ওয়াকফ বিল পাশের পরের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।