সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ব্যস্ত রাস্তায় বাস, অটোরিকশা ও গাড়ির ভিড়; ফুটপাথে হাঁটছে মানুষ। উঁচু মেট্রোরেলের পিলারে ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ লেখা পোস্টার লাগানো হয়েছে। ছবিগুলো পোস্ট করে বলা হয়েছে- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগমনকে কেন্দ্র করে দিল্লির রাস্তায় ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
গত চার ডিসেম্বর ‘Lalbag Barta’ নামক প্রোফাইল থেকে দুটি যুক্ত করে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, আজ সন্ধ্যায় ভারত সফল করবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট Vladmir Putin আর দিল্লির সড়কে stepdownyunus লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবি দুটি বাস্তব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে দিল্লির রাস্তায় ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ শীর্ষক পোস্টারের ছবি দুটি তৈরি করা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে হুবহু ছবিটির বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণ করে একটি ছবিতে মেট্রোরেলের পিলার ভাঙা, মেট্রোরেলের লাইনের নিচ দিয়ে আবার মেট্রোরেল চলছে- এ জাতীয় কিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। সাধারণত এই প্রযুক্তিতে তৈরিকৃত ছবিতে এই ধরণের অসঙ্গতি চোখে পড়ে। দেখুন --
সাম্প্রতিক সময়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি আলাদা ছবিকে একই দৃশ্যে জুড়ে দেওয়ার উদাহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনামূল্যে, অনেকটাই নিখুঁত এবং সহজলভ্য হওয়ায় এই ধরণের সম্পাদনার ক্ষেত্রে গুগলের জেনারেটিভ টুল 'জেমিনি (Gemini)' ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। জেমিনির ২.৫ ফ্ল্যাশ বা তার চেয়ে উন্নত মডেলে (ছবির ক্ষেত্রে ন্যানো ব্যানানা বলা হয়) আগের চেয়েও বেশি বাস্তবের ন্যায় যে কোনো ধরণের ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
ন্যানো ব্যানানা (Nano Banana) হলো গুগল-এর Gemini 2.5 Flash Image মডেলটির কোডনেম বা অভ্যন্তরীণ ডাকনাম। এই মডেলটি মূলত একটি উন্নত এআই ইমেজ এডিটিং মডেল যা টেক্সট কমান্ড বা বর্ণনা ব্যবহার করে ছবি তৈরি এবং সম্পাদনা করতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদে জেমিনির মডেলগুলোকে আরো উন্নত করা হয়েছে।
জেমিনি টুল দিয়ে তৈরি কিনা নিশ্চিত হতে গুগলেরই SynthID নামক ডিটেকশন টুলে ছবিটিকে যাচাই করা হয়েছে। কেননা গুগলের জেনারেটিভ টুলগুলো তাদের ইমেজ কন্টেন্টে সাধারণ ওয়াটারমার্কিংয়ের পাশাপাশি 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে শনাক্ত করা যায় না। তবে গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে।
এই শনাক্তকরণ টুলের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দুটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দুটি ছবির ফলাফলের কোলাজ দেখুন--
অর্থাৎ ছবিগুলো গুগলের এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে বাস্তবে ধারণ করা ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।




